4 June- 2023 ।। ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আজঃইতিহাসের আলোকিত অধ্যায়ের শুভ সূচনা…..

বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে দুটি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যার প্রথমটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্তি লাভ করে লন্ডন ও নতুন দিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। দ্বিতীয়টি হলো, ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পর ছয় বছরের নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে একটি আধুনিক স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্ররূপে গড়ে তুলেছিলেন। ’৭১-এর শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার জন্য পরাজিত পাকিস্তানের এ দেশীয় গোলামরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বেনামি পাকিস্তান বানিয়ে ফেলেছিল। সে সময় বিদেশে থাকায় দৈবক্রমে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গিয়েছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সৌজন্যে তারা দিল্লিতে আশ্রয় লাভ করেছিলেন।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্থাপনে যে দল নেতৃত্ব দিয়েছিল সে দলটির নাম-নিশানা মুছে দেবার জন্য এমন কোনো পন্থা নেই যা অনুসৃত হয়নি। ঐ প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫-এর ট্র্যাজেডির পর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এটা ছিল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের কারণেই শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, যার সুদূরপ্রসারী সুফল আজও বাংলাদেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে অপরাহ্নে শেখ হাসিনা তার নির্বাসন জীবন শেষে দিল্লি থেকে বিমানযোগে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। তখন গ্রীষ্মকাল, অঝোর ধারায় বর্ষা নামল, মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রকৃতি অঝোর ধারায় ক্রন্দনরত। বিমানবন্দর ঘনবর্ষণেও লোকে লোকারণ্য। শেখ হাসিনা, পিতা-মাতা, ভাই, নিকট আত্মীয় পরিজনহীন ঢাকায় নামলেন অশ্রুসিক্ত হয়ে। কিন্তু তার ছয় বছরের রুদ্ধ আবেগকে তিনি সংবরণ করতে পারলেন না, তিনিও প্রকৃতি ও জনতার অশ্রান্ত ক্রন্দনে শামিল হয়ে একটি ট্রাকে উঠলেন। বিমানবন্দর থেকে বনানী গোরস্তান, সেখানে সারি সারি শুয়ে আছেন মা, ভাইয়েরা, তাদের স্ত্রী, আত্মীয় পরিজন ও তিন জাতীয় নেতা। কবরগুলো তখনও বাঁধানো বা ঠিকমতো চিহ্নিত করা হয়নি। পঁচাত্তরের খুনিরা বঙ্গবন্ধুর কবর ঢাকাতে হতে দেয়নি। তার লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে গেছে এবং তড়িঘড়ি যেনতেন প্রকারে দাফন করেছে। ফলে দেশের মাটিতে নেমে শেখ হাসিনা একসঙ্গে বাবা-মা ও ভাইদের কবর দেখতে পান নি। বনানী গোরস্তানে সেই বর্ষাসিক্ত বিকেলে এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। মা ও ভাইদের কবরে আছড়ে পড়ে কাঁদতে লাগলেন শেখ হাসিনা। তিনি তার এতদিনকার সঞ্চিত বেদনা ও কান্নার ¯্রােতে ভেসে গেলেন। বনানী থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ, সেখানে এই অক্লান্ত বৃষ্টির মধ্যে শেখ হাসিনার জনসভা। এক শোকার্ত জনসমুদ্রে অশ্রু ভারাক্রান্ত শেখ হাসিনা যা বললেন তার মর্ম এই যে, যে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে তার পিতা সপরিবারে জীবন দিয়ে গেছেন সেই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করলেন। ঐ কথাগুলো বলতে বলতে বারবার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। প্রকৃতির কান্না, জনতার কান্না হাসিনার কান্নার সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছিল।
শেখ হাসিনা যখন নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে আসেন তখন ঢাকায় তার নিজের বাড়িঘর বলতে কিছু ছিল না। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩২নং ধানমন্ডির যে বাড়িটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাড়ি, সেটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তে রঞ্জিত এক ভয়াবহ মৃত্যুপুরী। ১৯৮১ সালে ১৭ই মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পরও বঙ্গবন্ধু ভবনের অধিকার ফিরে পাননি, সে বাড়ি তখনও ক্ষমতাসীন সরকারের দখলে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেও ধানমন্ডি বা টুঙ্গিপাড়ার বাড়ি দুটি সরকার সিল করে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুর কবরে কাউকে যেতে দেওয়া হতো না। শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ও টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির অধিকার ফিরে পান জুলাই মাসে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের শাসনামলে।
আশির দশকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর প্রায় দেড় দশক শেখ হাসিনাকে প্রথমে সামরিক স্বৈরাচার এবং স্বৈরাচারের উত্তরসূরিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠন ও তাতে নেতৃত্ব প্রদান করতে হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেন। প্রায় ২০ বছর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল ক্ষমতায় আসে কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার বিশ্বস্ত সহযোগী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান তখন নেই, তাদের নেতৃত্বের অভাব পূরণ করতে হয় শেখ হাসিনাকে প্রায় এককভাবে। পরিবার-পরিজনহারা শেখ হাসিনা দেড় দশকের অবিরাম প্রয়াসে সমস্ত ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশ এক দীর্ঘস্থায়ী প্রলয়ঙ্করী বন্যার কবলে পড়ে, হাসিনা সরকার সাফল্যের সাথে সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করে এবং নিত্যব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম পুরো শাসনামলে স্থিতিশীল রাখে। এটা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ প্রায় দুই দশক বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলে দেওয়া হয়েছিল সুপরিকল্পিত উপায়ে, শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দুই দশকজুড়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার অবসান ঘটে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়। টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বিশেষ বিশেষ দিনে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর কবরের ওপর যথাযোগ্য সৌধ স্থাপিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ হয়ে ওঠে জাতীয় তীর্থক্ষেত্র।
শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ১৯৯৯-২০০০ সাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা।
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতায় আন্তর্জাতিক ‘বইমেলা’ উদ্বোধন করেন। সে বছর কলকাতায় আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ ছিল ‘থিম কান্ট্রি’। একই বছর বিশ্বভারতী শেখ হাসিনাকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে এবং একই সাথে শেখ হাসিনা নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়া সফর করেন। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন এবং নজরুলের চুরুলিয়া একই সাথে সফর ছিল এক বিরল সাংস্কৃতিক ঘটনা। ঢাকার সাত মসজিদ রোডে যে জমিটির ওপর ছায়ানট সাংস্কৃতিক ভবন স্থাপিত হয়েছে সেই জমিটি শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলেই বরাদ্দ করা হয়েছিল। নজরুল জন্মশতবর্ষে ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে কলকাতা, শান্তিনিকেতন, দিল্লি, লন্ডন এবং ফ্লোরিডায় মহাসমারোহে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পেছনে বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির নেপথ্য সাহায্য, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যে কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শেখ হাসিনা। সর্বোপরি ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন ‘নজরুল সমাধি সৌধে’র নকশা অনুমোদন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যার নির্মাণকাজ শেষ হয় ১০ বছর পর। ২০০৯ সালে নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর আগে শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনার একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ৩২নং ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর ভবনটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর এবং জাতির উদ্দেশে তা উৎসর্গ করা। শেখ হাসিনার আরেকটি ঐতিহাসিক কাজ বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটির পা-ুলিপি উদ্ধার, সংরক্ষণ, সম্পাদনা ও প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধুর রচনাবলী প্রকাশনার মাধ্যমে শেখ হাসিনা পিতার এক অজানা দিক জাতির সামনে তুলে ধরেছেন এবং তা অনূদিত হয়ে বিশ্বময় প্রচারিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আরও কিছু রচনা এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী প্রকাশের অপেক্ষায়। ১৯৭৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তার ৩৫ বছর পর ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আবার বাংলায় ভাষণ দিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বাংলাভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাফতরিক ভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করে। বর্তমানে জাতিসংঘের ব্যবহৃত ভাষা হলো ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, চায়নিজ প্রভৃতি। জনসংখ্যার দিক থেকে বর্তমান পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ। সুতরাং তৃতীয় বিশ্বের কোনো ভাষাকে যদি জাতিসংঘের ব্যবহারের জন্য নির্বাচন করতে হয়, তা হলে বাংলা ভাষার দাবি অগ্রগণ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় বাংলাভাষা ব্যবহারের দাবি উত্থাপন করে এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তবে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব জাতিসংঘ কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা এবং ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা।
২০০৮ সাল থেকে পুনরায় শেখ হাসিনা পরপর দুবার বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন অর্থাৎ এ পর্যন্ত তিনি তিনবার বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করছেন। তার সরকারের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ তার হারানো গৌরব ফিরে পায়। বাংলাদেশ একটি উন্নততর আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ। একসময়কার তলাবিহীন ঝুড়ি নামে অভিহিত বাংলাদেশ আজ খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশে শিক্ষার হার ক্রমবর্ধমান। সরকার গত আট বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ বই বিতরণ করেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ঐ পর্যায়ে ছাত্রদের অপেক্ষা ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি, যা বাংলার পশ্চাৎপদ নারী সমাজে অগ্রগতির সূচক। নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিপুল অর্জনও শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ মহাসড়ক বর্তমানে চার-লেনে উন্নীত এবং কক্সবাজার টেকনাফ উপকূলে ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে যানজট নিরসনের জন্য অনেকগুলো ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ নিজস্ব সম্পদে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি জেলা শহরে মেডিকেল কলেজ এবং প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। মোটকথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে হাসিনা সরকারের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার পথে।
তবে ১৯৮১ সালে পাঁচ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সাফল্য পাকিস্তানের লেজুড়বৃত্তির পথ থেকে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ঐতিহ্যের পথে ফিরিয়ে আনা। যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গিয়েছিলেন, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর সে জাতিকে পুনরায় পশ্চাৎগামী করে তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বর্তমান সময় অবধি বিরোধী ও সরকারি দলের নেতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনর্জাগরণে যে সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা বাস্তবিকই তুলনারহিত। প্রসঙ্গক্রমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান, এ দুটি ঐতিহাসিক কর্তব্য সম্পাদন শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও দ্বারা সম্ভবপর হতে পারত বলে মনে হয় না। শেখ হাসিনার এই দুটি অবিসংবাদিত কীর্তি বাঙালি জাতির কলঙ্কমোচন এবং জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি হুমকি ও হত্যার চক্রান্ত এবং আন্তর্জাতিক চাপ কোনো কিছুই তাকে টলাতে পারে নি। এ ছাড়াও যে অপরিসীম ধৈর্য ও সাহসের সাথে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মদদপুষ্ট সশস্ত্র জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করে যাচ্ছেন তার নজির বিরল। যদি ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে না আসতেন তা হলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা কি হতো বলা কঠিন। হয়তো বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো এবং বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হতো না।
শেখ হাসিনার তিন দফা প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের সাথে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশের স্থলভূমির প্রায় সমপরিমাণ এলাকা অর্জন, ভারতের সাথে ছিটমহল সমস্যার সমাধান এবং ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে তাদের নাগরিক পরিচয় প্রদান এবং চূড়ান্তভাবে স্থলসীমানা নির্ধারণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর এবং দেশত্যাগী পার্বত্য চট্টগ্রামের শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা। জাতিসংঘে শেখ হাসিনা উপস্থাপিত বিশ্বশান্তির মডেল আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।
একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল যুগে রূপান্তর শেখ হাসিনার অন্যতম উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ইন্টারনেট সুবিধা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করা। বাংলাদেশে ৪ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটির ওপর। মোটকথা ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কথার কথা নয়, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার অনুষঙ্গ। বাংলাদেশে মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ক্রমশ কমে আসছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আবাসন ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু অন্তত ১০ বছর বেড়ে গেছে। গুচ্ছগ্রাম এবং আবাসন প্রকল্পের ফলে হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সকল নানামুখী সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থসহ আরও অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে অভাবনীয় সংযোগ সাধিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে স্যাটেলাইট টেলিভিশন, মোবাইল থ্রি-জি, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও এবং অনলাইন সংবাদপত্রের সংখ্যা আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের ‘তথ্যে প্রবেশাধিকার’ প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিদ্যুৎ এবং টেলিভিশন পৌঁছে গেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন প্রথম সারিতে। গার্মেন্ট রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং রিজার্ভে বাংলাদেশ এখন সর্বকালের রেকর্ড স্থাপন করেছে। মোটকথা বাংলাদেশ দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে ২০১৭ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে তা সম্ভবপর হতো কি-না সন্দেহ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবেন এটাই বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিক কামনা।

Sharing is caring!





More News Of This Category


বিজ্ঞাপন


প্রতিষ্ঠাতা :মোঃ মোস্তফা কামাল
◑উপদেষ্টা মহোদয়➤ সোহেল সানি
◑নজরুল ইসলাম মিঠু ◑তারিকুল ইসলাম মাসুম ◑এডভোকেট হুমায়ুন কবির(আইন উপদেষ্টা)
প্রধান সম্পাদক : মোঃ ওমর ফারুক জালাল

সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম(আমিন মোস্তফা)

নির্বাহী সম্পাদক: শফি মাহমুদ

বার্তা ও বানিজ্যিক সম্পাদক: বজলুর রহমান
প্রধান প্রতিবেদকঃ লাভনী আক্তার

ইমেইল:ajsaradin24@gmail.com

টেলিফোন : +8802-57160934

মোবাইল:+8801725-484563, বার্তা সম্পাদক+8801716-414756
টপ