‘জীববৈচিত্র্য রক্ষার সমাধান প্রকৃতিতেই’ এই বছরের জীববৈচিত্র্য দিবসের স্লোগান এটি। আজ ২২ মে, আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস।
জীববৈচিত্র্য ভাল থাকলে ভাল থাকবে পৃথিবী। আর পৃথিবী ভাল না থাকলে মানুষের যে ভাল থাকা সম্ভব না তার প্রমাণ চলমান করোনা সংকট। যতদিন জীববৈচিত্র্য ভাল ছিল আমরাও ভাল ছিলাম। কিন্তু জীববৈচিত্র্য সংকটে পড়ায় আমরাও পড়েছি সংকটে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের ছয় ঋতুর দেশ দিনে দিনে কেমন যেনো দুইটি ঋতুতে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বেড়েছে তাপমাত্রা। সব বরফ গলে গিয়ে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে সুন্দর এই পৃথিবীর। একের পর এক ঘুর্ণিঝর সৃষ্টি হচ্ছে।
ইতি মধ্যে অনেক প্রাণি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরও বড় একটি সংখ্যা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এতেই প্রমাণ হয় আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি ভাল নেই। যদি মানুষের নিজের স্বার্থের কথা ভাবি সেই স্বার্থপর চিন্তায় হলেও পরিবেশ রক্ষা করা উচিৎ। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হলে হুমকিতে পড়বে মানব প্রজাতির অস্থিত্ব। ইতিমধ্যে আমরা অনেক প্রমাণও পাচ্ছি। তাই এখনই আমাদের সচেতন হওয়ার শেষ সময়। শুধু একটি কাজ করলেই হবে। আপনাকে গাছ লাগাতে হবে না কোন পশু-পাখিকে সেবা দিতে হবেনা । শুধু একটা প্রতিজ্ঞা করোনা গাছ কাটবনা, পশু-পাখিকে হত্যা করবনা বা তাদের বাসা নষ্ট করবনা। মানুষের মত সবার যে বাচার অধিকার আছে তা মন থেকে মেনে নেব।
প্রকৃতিকে নষ্ট না করলে সে নিজেই তার অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। লকডাউনে আমরা এই প্রমাণ পেয়েছি। কক্সবাজারে ফিরে এসেছে ডলফিন। সৈকতে জন্মেছে সাগর লতা। এর মানে প্রকৃতি নিজেই তার অবস্থান ঠিক করে নিতে পারে।
সব কিছুর একটি সহজ উদাহরণ আমাদের সুন্দরবন। এই সুন্দরবন আমাদেরকে সব সময় বিপদ থেকে মায়ের মত আগলে রাখে। বাংলাদেশে জীববৈচিত্রের সব চেয়ে বড় উপহার সুন্দরবন যা আমাদের জন্য প্রাকৃতিক রক্ষাকবচও। প্রাণির সাথে বনের সম্পর্ক গভীর। এই যে আমাদের সুন্দরবন তার রক্ষাকর্তা বাঘ । যদি কোন দিন এই বাঘ না থাকে সুন্দরবন থাকবে?
অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’থেকে রক্ষায় এবারও বুক পেতে কিভাবে আমাদের রক্ষা করল সুন্দরবন। কিন্তু যদি সুন্দরবন না থাকত কি হত ? একবার ভাবুন।
আম্ফানের প্রভাবে সুন্দরবনে মৃত প্রাণিদের মধ্যে একটি হরিনের ছবি দেখলাম। এই ছবিটা দেখে ভেতর কেমন যেনো নাড়া দিয়ে উঠল। এত দ্রুত গতির একটি প্রানী পালিয়ে যেতে পারলনা । এতে প্রমাণ হয় কি ভয়ংকর ছিল আম্ফান।
মানুষের প্রয়োজনে হলেও আমরা প্রকৃতি কে রক্ষা করি। বন্যপ্রাণী যে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে পারলেই প্রকৃতির সব চেয়ে বড় উপকার। কারণ বেশীর ভাগ মানুষ জানেনা বলেই মাঝে মাঝে এদেরকে মারতে দেখি। পৃথিবীতে সবার সমান বাচার অধিকার রয়েছে । দেশের আইনেও বন্যপ্রাণী হত্যা দন্ডনীয় অপরাধ ।
আমাদের সবার যত্নে আবারও সুন্দর অবস্থায় ফিরে আসুক আমাদের প্রকৃতি।
Leave a Reply