4 June- 2023 ।। ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের চাহিদা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সামনে আনার: গৃহায়ণ ও পূর্তমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্টঃ

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ সময় পরেও মুক্তির জন্য সামগ্রিক যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতরা এখনো নিঃশেষ হয়নি। তাদের ধারাবাহিকতায় নতুন শত্রু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে গড়তে তাঁকে মনে ধারণ করে আমাদের সঞ্জিবনী শক্তিকে উজ্জীবিত করতে হবে। আমাদের আত্মস্থ করতে হবে আমরা কোথায় পৌঁছতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে নয়, সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মনে-প্রাণে ধারণ করা। দুর্নীতি, দুবৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, মাদক ও অনেতৈকতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার যে যুদ্ধ, তা আজও শেষ হয়নি।”

আজ বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে ইঙ্গিত করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, সংবিধান বিশেষজ্ঞের লিংক অব চেইন জামায়াতের সঙ্গে। যখন দেখি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে তিনি ২০ দলীয় জোটের ঐক্যের নেতা সাজেন; তখন বুঝি কোন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তিনি বিশ্বাস করেন। উনার চেইন জামায়াতের সঙ্গে। কথাগুলো পরিষ্কার করে বলতে হবে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির জামিনের পক্ষে নামার ঘোষণা দেন যখন একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ; তখন বোঝা যায় তিনি কীসের সুশাসন চান। তিনি চান দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সামনে আসুক।

গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তিনি সর্বপ্রথম বলেছিলেন বাঙালির ভালোবাসার ঋণ আমি বুকের রক্ত দিয়ে শোধ করে যাবো। ১৯৭৫ সালে তিনিসহ তার গোটা পরিবার রক্ত দিয়ে বাঙালির ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী শাসকরা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তৎকালীন শাসক জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের উৎসাহ প্রদান করেছিলেন। এ জন্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলায় বলা হয়েছে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী, রাষ্ট্র দখলকারী তস্কর।”

সাংবিধানিকভাবে দেশকে কোন বিশেষ ধর্মের রাষ্ট্র করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ দেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের দেশ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে যুক্ত করেছেন কোন বিশেষ ধর্মের ব্যক্তি আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। সকলের জন্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা এক থাকবে। ৭২ এর সংবিধানের ধারণা তিনি পুনরায় প্রতিস্থাপন করেছেন।”

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার পর দেশে ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “সে সময়ের বাংলাদেশের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাইতে গেলে সাম্প্রদায়িকতা যারা সৃষ্টি করে তাদেরকে নিয়ে স্পষ্ট কথা বলতে হবে। শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নয়, বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে দুঃসাহস দেখিয়ে দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করার সকল প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছেন এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সেটাকে দমন করেছেন। সম্প্রীতির বাংলাদেশে যে ফাটল ধরেছিলো, যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হয়েছিলো, সেই বিষবাষ্প এখনো শেষ হয়নি। এই বিষবাষ্প দূর করতে সবাই মিলে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধনের বাঙালিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে অনেক চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলো; অনেক বুদ্ধিজীবী বললেন, বিচারে না যেতে। তাদের শেকড় নাকি অনেক দূরে বিস্তৃত—দেশের বাইরে। শেখ হাসিনা বললেন— বঙ্গবন্ধু আইন করেছিলেন, আমি বিচার সম্পন্ন করবো। এটা আমার কমিটমেন্ট।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন ফোন করে কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত করতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দেখবো। একদিনও দেরি করেননি, ফাঁসি কার্যকর করেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, একাত্তরে তোমরা বিরোধিতা করেছ, এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে না করছ, তোমাদের সঙ্গে আমাদের আপস হতে পারে না।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘দুর্গাপূজার সময় আমাদের দেশে একটা মন্দিরও আক্রান্ত হয় না, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান আক্রান্ত হয় না, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা গির্জায় নিরাপদ থাকে। সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন তিনি বিমান থেকে নেমে বাংলার এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে বলেছিলেন, বাঙালির এই ভালোবাসা আমি বুকের রক্ত দিয়ে শোধ করে যাবো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি শুধু একা নন, গোটা পরিবার রক্ত দিয়ে ভালোবাসার ঋণ শোধ করে।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো যোগ করেন, “সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামলা বেগম খালেদা জিয়া ও তার সরকার মিলে করেছিলো। সরকার প্রধান হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সাপ্লিমেন্টারী চার্জশিট দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া আইনের দাবী।”

সম্প্রীতির বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যেপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য ড. মোঃ সামাদ সহ প্রমুখ ব্যাক্তি উপস্থিত ছিলেন।

Sharing is caring!



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



More News Of This Category


বিজ্ঞাপন


প্রতিষ্ঠাতা :মোঃ মোস্তফা কামাল
◑উপদেষ্টা মহোদয়➤ সোহেল সানি
◑নজরুল ইসলাম মিঠু ◑তারিকুল ইসলাম মাসুম ◑এডভোকেট হুমায়ুন কবির(আইন উপদেষ্টা)
প্রধান সম্পাদক : মোঃ ওমর ফারুক জালাল

সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম(আমিন মোস্তফা)

নির্বাহী সম্পাদক: শফি মাহমুদ

বার্তা ও বানিজ্যিক সম্পাদক: বজলুর রহমান
প্রধান প্রতিবেদকঃ লাভনী আক্তার

ইমেইল:ajsaradin24@gmail.com

টেলিফোন : +8802-57160934

মোবাইল:+8801725-484563, বার্তা সম্পাদক+8801716-414756
টপ