4 June- 2023 ।। ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্থাপত্য সৌন্দর্যের কুসুম্বা মসজিদ।

২০১০ সালে নওগাঁ সফরে যাওয়ায় কুসুম্বা মসজিদ দেখতে যাবার ইচ্ছা জাগে। এরই প্রক্ষিতে ৩০ মে মসজিদটি দেখার সুযোগ হয়। নওগাঁ জেলা শহর হতে ৫ কিমি দক্ষিণে মান্দা উপজেলার অন্তর্গত কুসুম্বা গ্রামে আত্রাই নদীর পশ্চিমতীরে এর অবস্থান। গ্রামটির নাম অনুসারে কুসুম্বা মসজিদটি নামকরন করা হয়। প্রায় সাড়ে চারশত বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে নওগাঁর ঐতিহাসিক এ মসজিদ, যা বর্তমানে পাঁচ টাকার নোটে মুদ্রিত। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আঙ্গিনার ভেতরে মসজিদটি অবস্থিত।বাংলায় আফগানদের শাসন আমলে শূর বংশের শেষ দিকের শাসক গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহ-এর রাজত্বকালে জনৈক সুলায়মান মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। এ মসজিদের নির্মাণকাল ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৮-৫৯ খ্রি.)। মসজিদটি শূর আমলে নির্মিত হলেও এটি বাংলার স্থাপত্য রীতিতেই নির্মিত। ধারণা করা হয়, তৎকালীন সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এখানে নামাজ আদায় করতেন। এ মসজিদ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত।

মসজিদটির মূল গাঁথুনি ইটের তৈরী হলেও এর বাইরের দেওয়ালের সম্পূর্ণ অংশ এবং ভেতরের দেওয়ালে পেন্ডেন্টিভের খিলান পর্যন্ত পাথর দিয়ে আবৃত। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫৮ফুট, প্রস্থে ৪২ফুট। দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। এর স্তম্ভ, ভিত্তিমঞ্চ, মেঝে এবং পাশের দেওয়ালের জালি নকশা পাথরের তৈরী। আয়তাকার এ মসজিদ তিনটি ‘বে’ এবং দুটি ‘আইলে’ বিভক্ত। পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পশ্চিম দেওয়াল থেকে সামান্য অভিক্ষিপ্ত। অভ্যন্তরভাগের কিবলা দেওয়ালে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এবং মাঝের প্রবেশপথ বরাবর মেঝের সমান্তরালে দুটি মিহরাব আছে। তবে উত্তর-পশ্চিম কোণের ‘বে‘তে অবস্থিত মিহরাবটি একটি উচু প্লাটফর্মের মধ্যে স্থাপিত। পূর্বদিকে স্থাপিত একটি সিঁড়ি দিয়ে এ প্লাটফর্মে উঠা যায়।মিহরাবগুলি খোদাইকৃত পাথরের নকশা দিয়ে ব্যাপকভাবে অলংকৃত। এগুলিতে রয়েছে বহুখাজ বিশিষ্ট খিলান। সূক্ষ্ম কারুকার্য খচিত পাথরের তৈরী স্তম্ভের উপর স্থাপিত এ খিলানগুলির শীর্ষে রয়েছে কলস মোটিফের অলংকরণ। স্তম্ভগুলির গায়ে রয়েছে ঝুলন্ত শিকল ঘন্টার নকশা। মিহরাবের ফ্রেমে রযেছে প্রায় সর্পিল আকারে খোদিত আঙ্গুর গুচ্ছ ও লতার নকশা। এ ছাড়া রয়েছে প্রায় বিন্দুর আকার ধারণকারী কলস, বৃক্ষলতা ও গোলাপ নকশা। প্লাটফর্মের প্রান্তেও রয়েছে আঙ্গুর লতার অলংকরণ। আর এ প্লাটফর্মের ভারবহনকারী খিলানের স্প্যান্ড্রিল এবং মসজিদের কিবলা দেওয়াল জুড়ে রয়েছে গোলাপ নকশা। মিহরাবগুলো কালো পাথরের তৈরি।

বাইরের দেওয়ালে আস্তরণ হিসেবে ব্যবহূত পাথরগুলি অমসৃণ এবং এতে রয়েছে গভীর খোদাইকার্য। বাইরের দিকে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন অলংকরণ গুলি ছাঁচে ঢালা। এগুলি দেওয়াল গাত্রকে উচু নিচু অংশে বিভক্ত করেছে। এ ছাড়া বক্র কার্নিশ জুড়ে, পাশ্ববুরুজগুলিকে ঘিরে, কার্নিশের নিচে অনুরূপ অলঙ্করন বিস্তৃত। পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালের গায়ে আয়তাকার খোপ নকশাকে ঘিরে ফ্রেম হিসেবে ছাঁচে ঢালা অলংকরণ রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের খিলানের স্প্যান্ড্রিল ছোট ছোট কলস ও গোলাপ নকশায় পরিপূর্ণ। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে রয়েছে জালি ঢাকা জানালা। মসজিদটির সম্মুখে ২৫.৮৩ একর আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। জলাশয়টি লম্বায় প্রায় ১২০০ ফুট ও চওড়ায় প্রায় ৯০০ ফুট। গ্রামবাসী এবং মুসল্লিদের খাবার পানি, গোসল ও অযুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই জলাশয়টি খনন করা হয়েছিল।

প্রয়োজন অনুযায়ী মসজিদটি সংস্কার করা, ভিতরে সার্বক্ষণিক আলোরব্যবস্থা করা, মসজিদের ভিতরটা আরো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা, ওয়ালগুলো রং করা, আশেপাশে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলার ব্যবস্থা করা ও হকার ও অস্থায়ী দোকানপাট একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি করার প্রয়োজন।
তথ্য সূত্রঃপারভীন হাসান।
লেখকঃএ কে এম আবুল কালাম আজাদ।

Sharing is caring!





More News Of This Category


বিজ্ঞাপন


প্রতিষ্ঠাতা :মোঃ মোস্তফা কামাল
◑উপদেষ্টা মহোদয়➤ সোহেল সানি
◑নজরুল ইসলাম মিঠু ◑তারিকুল ইসলাম মাসুম ◑এডভোকেট হুমায়ুন কবির(আইন উপদেষ্টা)
প্রধান সম্পাদক : মোঃ ওমর ফারুক জালাল

সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম(আমিন মোস্তফা)

নির্বাহী সম্পাদক: শফি মাহমুদ

বার্তা ও বানিজ্যিক সম্পাদক: বজলুর রহমান
প্রধান প্রতিবেদকঃ লাভনী আক্তার

ইমেইল:ajsaradin24@gmail.com

টেলিফোন : +8802-57160934

মোবাইল:+8801725-484563, বার্তা সম্পাদক+8801716-414756
টপ