23 September- 2023 ।। ৯ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুর তোফায়েল আহমেদ

আমিনুল ইসলাম-
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, উনসত্তরের গণআন্দোলনের মহানায়ক খ্যাত সংগ্রামী জননেতা তোফায়েল আহমেদের আজ ৭৭-তম জন্মদিন আজ। পিতা আজহার আলী ও মাতা ফাতেমা বেগমের কোল আলো করে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর দ্বীপজেলা ভোলার কোড়ালিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ অব্দটি বাংলার ইতিহাসে ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বছরটি ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মহাধ্বংসযজ্ঞের কাল। এই কালপর্বে বাংলায় ভয়াবহ খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। এতে প্রায় ৪০ লক্ষ মানব সন্তান অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। সেদিন ছিল দেশব্যাপী মহাবিপর্যায়ের ঘোর ঘনঘটা। তখন কে জানত যে, বাংলার প্রত্যন্ত জনপদ ভোলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী এই শিশুটি একদিন বড় হয়ে বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে নিজ জীবনকে নিবেদন করে বাঙালির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ইতিহাসের মহোত্তম অধ্যায় সৃষ্টিতে অবদান রাখবেন!
১৯৬০-এ ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এটা ছিল তাঁর জন্য বেদনাদায়ক। সেজন্য ঢাকা কলেজ ছেড়ে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। তাঁর মাতৃভক্তি অনন্য এবং অনুসরণীয়! কলেজে পড়াকালে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অভিযাত্রার শুরু। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ, ক্লাস ক্যাপ্টেন, স্কুল ক্যাপ্টেন, পরে যথাক্রমে ছাত্রলীগের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি, অ্যাডমিন সেক্রেটারি, ব্রজমোহন কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্রীড়া সম্পাদক, পরে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন, তারপর হলের নির্বাচিত সহ-সভাপতি, সোশ্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের ভিপি, ডাকসু’র ভিপি, ’৬৯-এর গণআন্দোলনে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন এবং ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ’৬৭ থেকে ’৬৯ সন পর্যন্ত ডাকসু’র ভিপি থাকাকালে চারটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বঙ্গবন্ধু মুজিব প্রদত্ত ৬ দফা (দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ) হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য যে, ’৬৬-এর ৮ মে থেকে ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সকল রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলেন এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তিদানে স্বৈরশাসককে বাধ্য করেন। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মুক্তমানব শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আর ’৬৯-এর ২৫ মার্চের মধ্যে তথাকথিত প্রবল পরাক্রমশালী লৌহমানব স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য করে গৌরবের যে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সেল। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে অর্জিত হয় বাংলার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার তথা ভোটাধিকার। এরপর ’৭০-এর ৭ জুন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ভোলা-দৌলতখাঁ-তজুমুদ্দীন-মনপুরা আসন থেকে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ২৬ বছর বয়সে মনোনয়ন দেন। ’৭০-এর ১২ নভেম্বর
আমিনুল ইসলামঃ
প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ১০ লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ভোলায় তাঁর নির্বাচনী এলাকা ছিল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি আসনের নির্বাচন পিছিয়ে ’৭১-এর ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নব-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে পাকিস্তান সামরিক শাসক গোষ্ঠীর তাল-বাহানার পরিপ্রেক্ষিতে ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বীয় বাসভবনে ৪ যুবনেতাকে-শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ-আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর ’৭১-এর মার্চের ১ তারিখ পূর্বাহ্নে আহূত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণায় সারা দেশ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। শুরু হয় সর্বব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন। দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করতে তিনি উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে ২৫ মার্চ রাত ১২টায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। শুরু হয় সর্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে জাতির জনকের পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী তিনি শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
মহান জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন এবং সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠায় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তোফায়েল আহমেদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে,থাকবে চিরদিন। স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার মহতী স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম সারথী সংগ্রামী গণনায়ক তোফায়েল আহমেদের শুভ জন্মদিনে তাঁর সফলকাম দীর্ঘজীবন কামনা করি।
লেখকঃরাজনীতিবিদ,কলামিস্ট।

Sharing is caring!





More News Of This Category


বিজ্ঞাপন


প্রতিষ্ঠাতা :মোঃ মোস্তফা কামাল
◑উপদেষ্টা মহোদয়➤ সোহেল সানি
◑নজরুল ইসলাম মিঠু ◑তারিকুল ইসলাম মাসুম ◑এডভোকেট হুমায়ুন কবির(আইন উপদেষ্টা)
প্রধান সম্পাদক : মোঃ ওমর ফারুক জালাল

সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম(আমিন মোস্তফা)

নির্বাহী সম্পাদক: শফি মাহমুদ

বার্তা ও বানিজ্যিক সম্পাদক: বজলুর রহমান
প্রধান প্রতিবেদকঃ লাভনী আক্তার

ইমেইল:ajsaradin24@gmail.com

টেলিফোন : +8802-57160934

মোবাইল:+8801725-484563, বার্তা সম্পাদক+8801716-414756
টপ